জল বারে জল ঝরে সারাদিন সারারাত -
অফুরান নামতায় বাদলের ধারাপাত।
আকাশের মুখ ঢাকা, ধোঁয়ামাখা চারিধার,
পৃথিবীর ছাত পিটে বামাঝম্ বারিধার।
স্নান করে গাছপালা প্রাণখোলা বরষায়,
নদীনালা ঘোলাজল ভরে উঠে ভরসায়।
উৎসব ঘনঘোর উন্মাদ শ্রাবণের
শেষ নাই শেষ নাই বরষার প্লাবনের।
জলেজলে জলময় দশদিক টলমল্
অবিরাম একই গান, ঢালো জল, ঢালো জল।
ধুয়ে যায় যত তাপ জর্জর গ্রীষ্মের,
ধুয়ে যায় রৌদ্রের স্মৃতিটুকু বিশ্বের।
শুধু যেন বাজে কোথা নিঃঝুম ধুকধুক,
ধরণীর আশাভয় ধরণীর সুখদুখ।
'অফুরান নামতায়
বাদলের ধারাপাত' - গণিতে 'নামতা' বলতে বোঝায় গুণ করার ধারাবাহিক তালিকা; আর 'ধারাপাত' হলো অঙ্ক শেখার প্রাথমিক বই। এ কবিতায় বৃষ্টিধারার পতনকে বলা হচ্ছে ধারাপাত; বৃষ্টির পতনের অবিরাম রিমঝিম ধ্বনি অনেকটা যেন শিশুদের নামতা পড়ার শব্দের মতো।
ছাত - ছাদ। ছাদের কথ্য রূপ।
বারিধার - জলের ধারা।
উন্মাদ - উন্মত্ত, ক্ষিপ্ত। শ্রাবণ মাসে অবিরাম ধারা বর্ষণ ঘটে বলে কবি এখানে শ্রাবণকে 'উন্মাদ শ্রাবণ' বলেছেন।
জর্জর - কাতর।
নিঃঝুম - নিঝুম, নীরব, নিঃশব্দ।
"শ্রাবণে” কবিতাটি সুকুমার রায়ের 'খাই খাই' ছড়াগ্রন্থের অন্তর্গত। গ্রীষ্মের দাবদাহে জর্জরিত প্রকৃতি অবিরাম বর্ষায় স্নান করে সজীব ও প্রাণবন্ত রূপ ধারণ করেছে, কবিতায় সে ছবিই আঁকা হয়েছে। বর্ষার জলে গাছপালা নদী-নালা থেকে শুরু করে রুক্ষ প্রকৃতি মুহূর্তেই জলে পরিপূর্ণ হয়। প্রকৃতিতে প্রাণের সঞ্চার ঘটে। গ্রীষ্মকালের রোদের চিহ্ন ধুয়ে মুছে প্রকৃতি এ সময় নতুন রূপ ধারণ করে। এভাবেই ঋতুর পালাবদলের মতো মানব-মনের আশা-আকাঙ্ক্ষা, সুখ-দুঃখের পালাবদল ঘটে।
শিশু-কিশোর পাঠকদের কাছে সুকুমার রায় একটি প্রিয় নাম। তাঁর আদি পৈতৃক নিবাস ময়মনসিংহ জেলায়। বাংলা সাহিত্যে তিনি অমর হয়ে আছেন প্রধানত রসের কবিতা, হাসির গল্প, নাটক ইত্যাদি শিশুতোষ রচনার জন্য। 'আবোল তাবোল', 'হযবরল', 'পাগলা দাশু' প্রভৃতি তাঁর অতুলনীয় রচনা। তাঁর পিতা উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী একজন বিখ্যাত শিশুসাহিত্যিক। কিংবদন্তি চলচ্চিত্র-নির্মাতা ও খ্যাতিমান সাহিত্যিক সত্যজিৎ রায় তাঁর পুত্র। সুকুমার রায়ের জন্ম কলকাতায় ১৮৮৭ খ্রিষ্টাব্দে এবং মৃত্যু ১৯২৩ খ্রিষ্টাব্দে।
ক. শ্রাবণ মাসে তোমার এলাকায় কী কী পরিবর্তন ঘটে? লিখ।
খ. বর্ষার গান ও কবিতা নিয়ে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন কর।
১. শ্রাবণের জল অবিরাম ঝরে-
ক. সংগীতের মতো
খ. কোলাহলের মতো
গ. গণিতের মতো
ঘ. নামতার মতো
২. 'অবিরাম একই গান' বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
ক. বর্ষার প্লাবন
খ. নদীর ঘোলাজল
গ. একটানা বৃষ্টি
ঘ. সংগীত সন্ধ্যা
৩. বর্ষণমুখর দিনে অরণ্যের কেয়া শিহরায়, রৌদ্র-দগ্ধ ধানক্ষেত আজ তার স্পর্শ পেতে চায়,
উদ্দীপকটি 'শ্রাবণে' কবিতার কোন দিকটির সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ?
ক. অবিরাম বৃষ্টি
খ. মেঘলা আকাশ
গ. বৃষ্টিস্নাত প্রকৃতি
ঘ. তাপ ধুয়ে যাওয়া
8. 'বৃষ্টি এল কাশবনে জাগল সাড়া ঘাসবনে'
উদ্দীপকের ভাবধারা 'শ্রাবণে' কবিতার কোন পঙ্ক্তিতে প্রতিফলিত হয়েছে?
ক. অফুরান নামতায় বাদলের ধারাপাত
খ. আকাশের মুখ ঢাকা, ধোঁয়ামাখা চারিধার
গ. স্নান করে গাছপালা প্রাণখোলা বরষায়
ঘ. নদীনালা ঘোলাজল ভরে উঠে ভরসায়
উদ্দীপক (১) আজিকার রোদ ঘুমায়ে পড়িছে- ঘোলাটে মেঘের আড়ে, কেয়া বন পথে স্বপন বুনিছে- ছল ছল জলধারে। কাহার ঝিয়ারী কদম্ব শাখে- নিঝুম নিরালায়, ছোট ছোট রেণু খুলিয়া দিয়াছে- অস্ফুট কলিকায়।
উদ্দীপক(২) কেউবা রঙিন কাঁথায় মেলিয়া বুকের স্বপনখানি, তারে ভাষা দেয় দীঘল সুতার মায়াবী আখর টানি।
ক. প্রাণখোলা বর্ষায় কে স্নান করে?
খ. 'উন্মাদ শ্রাবণ' বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
গ. ১ম উদ্দীপকে 'শ্রাবণে' কবিতায় বর্ণিত বর্ষার কোন দিকটি চিত্রিত হয়েছে? বর্ণনা কর।
ঘ. ২য় উদ্দীপকটি 'শ্রাবণে' কবিতার শেষ চরণে প্রতিফলিত হয়েছে কি? যুক্তিসহ বিচার কর।
common.read_more